রাকিব আর আমার মধ্যে একটা জায়গায় বেশ মিল আছে। দুজনেই ব্যাকবেঞ্চার। তবে আর সব দিক থেকে আমাদের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। রাকিব ধনী বাবার একমাত্র সন্তান। আর আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ছাপোষা মানুষ। উচ্চবিত্তদের লাইফস্টাইল থাকে জমকালো। আড্ডা-ফুর্তি-মাস্তি নিয়েই মত্ত থাকে ওরা। রাকিবও তেমন। বলে রাখা ভালো, রাকিব ওর ছদ্মনাম। ইচ্ছে থাকলেও আসল নামটা বলতে পারছি না। ও বারণ করেছে।
ভার্সিটির লাঞ্চ ব্রেক হয় বেলা একটায়। একটার দিকেই আজান হয় মসজিদে। সোয়া একটায় সালাত। সালাত শেষে দুপুরের খাবার খেতে ক্যান্টিনে গেলাম। লাঞ্চ করতে করতে রাকিব জানাল, নিজের জীবন নিয়ে এখন সে অতিষ্ঠ। হতাশার সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। কোনো কাজেই তার মন বসছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, লাইফস্টাইল চেইঞ্জ করে দেখবে কী হয়।
রাকিবের কথা শুনে আমি আনন্দিত হলাম। যাক, শেষমেশ বন্ধুটা ভুলগুলো বুঝতে পেরেছে। ও নিজের হতাশার কারণ জানাল। বাবার কাছে আবদার করে কোনো জিনিস পায়নি, এমন রেকর্ড নেই লাইফে। আইফোন থেকে শুরু করে প্রাইভেট কার, সবই আছে ওর। এতকিছুর পরেও নাকি সে শূন্যতা অনুভব করে। মাঝেমধ্যে চোখের জল ফেলে নীরবে।
ক্লাস শেষে আমরা গন্তব্যে ফিরছি। রাকিব জোর করে আমায় ফুচকা চত্বরে বসাল। সামনে পুকুর, দু-পাশে গাছপালা, আর বিকেলের মিষ্টি রোদ—পরিবেশটা অনেক সুন্দর। রাকিব জানাল, কদিন ধরে সে ঘুমোতে পারছে না। চোখে ঘুম থাকলেও অন্তর জেগে থাকছে। রাত পেরিয়ে যাচ্ছে বিছানায় গড়াগড়ি করে আর গান শুনে। কাল ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়েছে। এখন সে কী করবে, বুঝে উঠতে পারছে না। ফুচকা খেতে খেতে আমি ওকে কিছু ঘটনা শুনালাম। ঘটনাগুলো একটু গুছিয়ে লিখেছি এখানে :
১.
মডেল সিনহা রাজ। পুরো নাম মাহাতারা রহমান শৈলী। বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। পিতা-মাতা বিয়েও দিয়েছিলেন তাদের পছন্দে। কিন্তু স্বামীকে পছন্দ হয়নি তার। তাই নতুন করে সংসার গড়েছিল অভিজিতের সাথে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করত মিডিয়ায়। অভিজিৎ অভিনয় করত বিভিন্ন নাটকে। পরিচালক হিসেবেও কাজ করত। ওই জগতে তার নাম ছিল অভিজিৎ অভি।
মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকত দুজন। বাইরে বাইরে খুব ভালোই কাটছিল জীবন। কিন্তু কোনো এক মধ্যরাতে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায় সিনহাকে। অভিজিৎ ও প্রতিবেশীরা তাকে নামিয়ে আনে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। তীব্র হতাশা আর বুকচাপা কষ্ট নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় শৈলী।
২.
চেস্টার বেনিংটন। একজন মার্কিন গায়ক। গীতিকার এবং অভিনেতা। বহুল পরিচিত লিংকিন পার্কের ভোকাল। এ ছাড়া দুটো রক ব্যান্ড ডেড-বাই-সানরাইজ ও স্টোন-টেম্পল-পাইলটসের সাথেও জড়িত ছিল সে। চেস্টার পরিচিতি লাভ করে ২০০০ সালে। লিংকিন পার্কের প্রথম অ্যালবাম হাইব্রিড-থিয়োরিতে ভোকাল হিসেবে গান গাওয়ার মাধ্যমে। অ্যালবামটি ব্যাপক সফলতা পায়। ওই দশকের সেরা অ্যালবামের তালিকায় স্থান করে নেয় হাইব্রিড-থিয়োরি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি চেস্টারকে।
লিংকিন পার্ক-পরবর্তী ওর স্টুডিয়ো অ্যালবামগুলো হলো—মিটিয়োরা, মিনিটস্-টু-মিডনাইট, এ-থাউজ্যান্ড-সানস্ এবং লিভিং-থিংস্। এগুলো যথাক্রমে ২০০৩, ২০০৭, ২০১০ এবং ২০১২ সালে প্রকাশ পায়। বেনিংটন তার নিজের ব্যান্ড ডেড-বাই-সানরাইজ শুরু করে ২০০৫ সালে। ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম আউট-অব-অ্যাশেজ প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখে। বেনিংটনকে শ্রেষ্ঠ ১০০ হেভি মেটাল ভোকালিস্টদের একজন মনে করা হয়। গত ২০ জুলাই, ২০১৭-তে ক্যালিফোর্নিয়ার নিজ বাড়িতে তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। লক্ষ জনতার মনজয়কারী এ গায়ক লস অ্যাঞ্জেলসের ‘পালোস ভার্দোস স্টেটে’ আত্মহত্যা করে। লাখ লাখ ফ্যান-ফলোয়ারদের কাঁদিয়ে নিজের অশান্ত আত্মার কাছে পরাজিত হয়ে গলায় দড়ি দেয় চেস্টার।
৩.
২৪ মে, ২০১৭। মঙ্গলবার। ভোর ৫টা নাগাদ মিরপুরের রূপনগরের সাবলেট বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সাবিরা হোসাইনের লাশ। গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
সাবিরা বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের মডেল ছিল। একই সাথে মোহনা টেলিভিশন এবং গান বাংলা টেলিভিশনের মার্কেটিং অ্যাক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিল। পারিবারিক ও প্রেমঘটিত কারণে বেশ ক’মাস মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল সাবিরা। ফেইসবুকে আত্মহত্যার বিষয়ে ইঙ্গিতও দিচ্ছিল সে। মানসিক বিপর্যস্ততার হাত থেকে বাঁচতে শেষমেশ আত্মহত্যা করে সাবিরা।
৪.
রক ব্যান্ড অ্যামারসন এবং লেক অ্যান্ড পামারের সহপ্রতিষ্ঠাতা কিথ এমারসন। মারা গেলেন ৭১ বছর বয়সে। বিখ্যাত এই ব্যান্ডটির ফেইসবুক পেইজে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ফেইসবুক পেইজে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে কেইথ অ্যামারসন সান্তা মনিকা, লস অ্যাঞ্জেলসে তার নিজের বাড়িতে মারা গেছেন।’ অ্যামারসনের গার্লফ্রেন্ড মারি কাওয়াগুচি, শুক্রবার সকালে তার মৃতদেহ আবিষ্কার করে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
ওদিকে আবার মোহাম্মদপুরের বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে লাক্স তারকা সুমাইয়া। এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডলি আনোয়ারও একই পন্থায় আত্মহত্যা করে মারা যান। গত কয়েক বছরে তারকাদের আত্মহত্যার তালিকায় রয়েছেন—মডেল ও অভিনেত্রী মিতা নূর, লাক্স তারকা রাহা, মডেল ও অভিনেতা মঈনুল হক অলি, সিনহা, নায়লা, লোপা, সাবিরা, পিয়াস-সহ আরও অনেকেই। আর আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বেঁচে আছেন লাক্স তারকা জাকিয়া বারী মম, কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসি, মডেল ও অভিনেত্রী প্রভা এবং সারিকা। এর বাইরে অপ্রকাশিত তালিকায় যে কত শত অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম যে জড়িয়ে আছে, তা আল্লাহই ভালো জানেন।
ঘটনাগুলো শোনানোর পর আমি জিজ্ঞেস করলাম রাকিবকে, ‘আচ্ছা বন্ধু, তারা কেন আত্মহত্যা করল? কিসের অভাব ছিল তাদের? জনপ্রিয়তা?’
রাকিব বলল, ‘নাহ! আমাদের থেকেও তো বহুগুণে বেশি জনপ্রিয় ছিল এরা।’
‘তা হলে কি টাকা-পয়সার অভাব ছিল ওদের?’
‘নাহ, তাও তো না। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের টাকা কম থাকবে নাকি?’
‘তা হলে? কী ছিল না তাদের? কোন জিনিস না-পাওয়ার বেদনা তাড়া করত ওদের? কেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকত ওরা? আর এতকিছু পাওয়ার পরও কেনই-বা তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে?’
আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি রাকিব। রাকিবের প্রশ্নটাই যদি তোমাকে করি, কী উত্তর দেবে? হুটহাট প্রশ্ন করেছি বলে ঘাবড়ে গেলে? উত্তরটা ভাবতে থাকো। তার আগে একটা হাদীস শোনাই। নবি ﷺ বলেছেন,
[বুখারি, আস-সহীহ, ৫০]
“জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে। যখন তা ঠিক হয়ে যায়, তখন পুরো শরীরই ঠিক হয়ে যায়। আর যখন তা খারাপ হয়ে যায়, তখন পুরো শরীরটাই খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সে গোশতের টুকরোটি হলো অন্তর।”
যে অন্তর জীবনের মূল চালিকাশক্তি, সেটিকে তোমরা অস্বীকার করো বিজ্ঞানের নাম দিয়ে। আজকাল বিজ্ঞান হয়ে গেছে ছেলের-হাতের-মোয়া। যে যেভাবে চাচ্ছে, সেভাবেই ব্যবহার করছে। এসব বিজ্ঞান-অজ্ঞানের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ভেবে দেখো তো একবার, অন্তর ভালো থাকলে জীবনটা কি সতেজতায় ভরে যায় না? আর মনটা যখন খারাপ থাকে, তখন জীবনটা কি থমকে যায় না? বিষণ্ণতা মাথার ওপর চেপে বসে না?
বস্তুবাদ ইয়াং জেনারেশানকে ডুবিয়ে রেখেছে সেক্স-মিউজিক-মুভি-ড্রাগ-মানি-ক্যারিয়ারের সমুদ্দুরে। অতৃপ্ত আত্মার মানুষগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এসবের ওপর। হৃদয় প্রশান্তকারী উপাদান খুঁজছে এসবের মধ্যে। কিন্তু এসব কি আদৌ মনকে নির্মল করতে পারে? দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে পারে মানুষকে?
এসব যদি সত্যিই হৃদয়ে ফাগুনহাওয়া এনে দিতে পারত, তবে তো আত্মহননের পথ বেছে নিত না অর্থ-বিত্ত-বৈভবের মাঝে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো। নির্জনে চোখের জল ফেলত না রাকিবের মতো আদুরে দুলালরা। না পাওয়ার বেদনা তাড়া করত না সুপার স্টারদেরকে। লাখ লাখ ফলোয়ার থাকা সত্ত্বেও একাকীত্ব অনুভব করত না সেলিব্রেটিরা।
আধুনিক বিশ্বের সাথে খাপ-খাওয়াতে-চাওয়া মানুষগুলোর অন্তরটা শূন্যই রয়ে যায়। ওরা সারাক্ষণ আরও চাই আরও চাই স্লোগানে ডুবে থাকে। পান থেকে চুন খসলেই বেঁচে থাকাটা অর্থহীন হয়ে যায় ওদের কাছে। যাদের অভিধানে আখিরাত নামক কোনো শব্দের চ্যাপ্টার নেই, তাদের অবস্থা তো এমনটা হবেই। দুনিয়ার সুখ-শান্তিই যাদের মুখ্য বিষয়, হতাশা তাদের গ্রাস করবে না তো কাদের করবে বলো!
রাকিবের মতো তুমিও হয়তো হতাশায় নিমজ্জিত। জীবনের সঠিক গন্তব্য না থাকার কারণে, তোমার হৃদয়ও হয়তো ক্ষত-বিক্ষত। না পাওয়ার বেদনাই তোমার নিত্যসঙ্গী। আসলে বাহ্যিক উন্নতি-প্রগতিই তো মূল বিবেচ্য বিষয় তোমার কাছে। গার্লফ্রেন্ড-ফেইসবুক-মিউজিক-সেক্স এগুলোর চিন্তায় বিভোর হয়ে আছ তুমি। আত্মিক জিনিসপত্তরের আর ঠাঁই দিলে কোথায়!
ভাই আমার! বিশ্বাস করো, এসব ধোঁকার সামগ্রী আমাদেরকে সাময়িক উত্তেজনা এনে দিতে পারে, কিন্তু কখনোই অন্তরকে নির্মল করতে পারে না।
[সূরা রদ, ১৩ : ২৮]
“জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়।”
যে আল্লাহ এই মনের স্রষ্টা, তিনিই বলেছেন—অন্তরের প্রশান্তি একমাত্র তাঁকে স্মরণ করার মধ্যেই। আসলে হৃদয়ের স্রষ্টা এভাবেই সেটাপ করেছেন হৃদয়কে। কিন্তু সেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্তরে যখন গাড়ি-বাড়ি-নারী-চাকরি স্থান পাবে, তখন হতাশা কেবল বাড়তেই থাকবে। না পাওয়ার বেদনা তাড়া করে বেড়াবে ক্ষণে ক্ষণে। ‘কী যেন নেই আমার!’ ‘কোন জিনিস যেন আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে!’ ‘কোথায় যেন একটা শূন্যতা রয়ে গেছে!’—মনে এমন ভাবনার উদয় থাকবে প্রতিনিয়ত।
[সূরা ত্বহা, ২০ : ১২৪]
“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের ওঠাব দিন অন্ধ অবস্থায়।”
যে আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে, তার জীবনটা হাহাকারময় হয়ে যাবে। সবকিছু পাওয়ার পরও সংকীর্ণ মনে হবে ধরণীকে। হাজার হাজার ফ্যান-ফলোয়ার থাকা সত্ত্বেও হতাশা কাটানোর জন্যে বেছে নিতে হবে আত্মহত্যার পথ। আধুনিক বিশ্বের দিকে তাকালে এই সত্যিটা স্পষ্ট হবে তোমার কাছে। হতাশা কাটাতে পশ্চিমারা অ্যালকোহল গ্রহণ করে, পার্টিতে যায়, সেক্স করে, ড্রাগ নেয়—কিন্তু দিনশেষে মোটাদাগে হতাশাগ্রস্তই থেকে যায়। কারণ নেশার-ঘোরে থাকলে হয়তো ব্যথা-বেদনা ভুলে থাকা যায়, কিন্তু নেশা কেটে গেলে তা আবার চাঙা হয়ে ওঠে। এসব নেশার সামগ্রী তো সাময়িক সমাধানমাত্র। কিন্তু বাস্তব জীবনটা আর তো ক্ষণিকের নয়। পিচঢালা রাজপথ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, আর দালান-কোঠার আধিক্য দেখে ভেবো না ওরা খুব শান্তিতে আছে। যদি শান্তিতেই থাকত, তবে আত্মহত্যায় ফার্স্ট হতো না ওরা। ধনী দেশগুলোর তালিকায় ওরা যেমন সামনের সারিতে রয়েছে, তেমনই আত্মহত্যার তালিকায়ও সামনের সিটগুলোই দখল করে রেখেছে ওরা।
ওদের কথা আপাতত থাক। চলো, দুজনে মিলে ঝটপট একটা ক্যালকুলেশান করে ফেলি। মনে মনে দুজন ব্যক্তিকে কল্পনা করো।
একজন দিবানিশি অর্থের পেছনে ছুটে চলে। মানি-সেক্স-পর্ন-মিউজিক-ব্রাইট ক্যারিয়ার এসবকে জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়েছে সে। তার কাছে বৈধ-অবৈধ সবই সমান। সে যে-কোনো মূল্যে নিজের ইচ্ছেগুলো পূর্ণ করতে যায়। প্রতিটি ক্ষণ ওসবের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। ফলে নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-হতাশা তার নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়।
আরেকজন ব্যক্তি মুমিন। যে কিনা আখিরাতের সফলতাকেই প্রকৃত লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছে। সে বৈধ-অবৈধ পথ তোয়াক্কা করে চলে। নিজের দুনিয়াবি খায়েশগুলো কতটা পূর্ণ হলো সেদিকে না তাকিয়ে, কে ইবাদতের মাধ্যমে জান্নাতের মর্যাদা বাড়িয়ে নিল—সর্বদা সেদিকে লক্ষ রাখে। ফলে রাতের বেলা সাজদায় গিয়ে কায়মনোবাক্যে রবের কাছে দুআ করে। আরও বেশি বেশি নেক আমল করার সুযোগ চায়।
এবার বলো তো, এই দু-ধরনের ব্যক্তির মধ্যে কে বেশি সুখী?
প্রথম ধরনের ব্যক্তি ক্ষণস্থায়ী সুখের মোহে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে রাতের আঁধারে। দিনশেষে তার অন্তরে কেমন জানি একটা অনুশোচনার জন্ম নেয়। কেউ তাদের অন্তরঙ্গতার সময় দরজায় করাঘাত করছে কি না, এটা ভেবে সে উৎকণ্ঠিত থাকে। বিবেকের দংশন তাকে শঙ্কিত করে তুলে—মেয়েটা কি তবে গর্ভবতী হয়ে যাবে, গর্ভপাত কি করাতেই হবে… পরিস্থিতি অবনতি ঘটার সাথে সাথে তার উদ্বেগ বাড়তেই থাকে। পাপের এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায়, এক নারীর বিছানা থেকে আরেক বিছানায়, এক পানীয় থেকে অন্য পানীয়তে, একটা অশ্লীল ভিডিয়ো থেকে অন্যটিতে বেপরোয়াভাবে ঘুরপাক খায়। পাপের চক্রে পিষ্ট হতে থাকে অনবরত। আল্লাহর সাথে সৃষ্ট দূরত্ব তার অন্তরকে ধীরে ধীরে কঠিন করে ফেলে। জীবনকে করে তুলে অন্ধকারাচ্ছন্ন। সে তার অন্তরের শূন্যতা পূরণ করতে চায় যে-কোনো মূল্যে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। শেষমেশ অতৃপ্ত আত্মার কাছে হার মানে।
অপরদিকে দ্বিতীয় ধরনের ব্যক্তি মনে করে, দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টগুলোও ক্ষণস্থায়ী। এগুলো একদিন ঠিকই ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু আখিরাতের দুঃখ-কষ্টগুলো ফুরোবে না কখনো। চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার পর আর কাউকেই জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না। এ কথা সে মাথায় রাখে সব সময়। ফলে দুনিয়ার ক্ষতিটাকে পরীক্ষা আর আখিরাতের ক্ষতিটাকে সর্বনাশ হিসেবে বিবেচনা করে।
[সূরা আল-আনফাল, ০৮ : ৩৭]
“আর আল্লাহ খারাপ লোকদের একজনকে আরেকজনের ওপর রেখে স্তূপ করবেন, এরপর এদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (প্রকৃপক্ষে) এরাই চরম ক্ষতিগ্রস্ত।”
সে দুনিয়ার ব্যথা-বেদনাগুলোর ওপর সর্বদা সবর করে। এগুলোকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য ধরে। সে যা পায়নি, তা নিয়ে কখনো আফসোস করে না। কারণ, সে বিশ্বাস করে—না পাওয়া বস্তুটা তারই ছিল না। আর যে জিনিস তার নয়, সেটা নিয়ে খামোখা দুশ্চিন্তা করাটা বোকামো মনে হয় তার কাছে। সে দুনিয়াকে একটা পরীক্ষাক্ষেত্র হিসেবে দেখে। দুনিয়ায় বিভিন্নভাবে তাকে খতিয়ে দেখা হবে। কখনো ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে, কখনো ব্যবসায়িক লসের মাধ্যমে, কখনো-বা প্রিয় জিনিস তুলে নেওয়ার মাধ্যমে।
[সূরা বাকারাহ, ০২ : ১৫৫]
“আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, জানমাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি ইত্যাদি কিছু একটা দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আর তুমি সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।”
তাই পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্যে সব সময় প্রস্তুত থাকে সে। যদি ভালো কিছু পায়, তো রবের শুকরিয়া আদায় করে। কিছু হারিয়ে গেলে ধৈর্যধারণ করে। কারণ সে জানে, এই ধৈর্যই তাকে পৌঁছে দেবে চূড়ান্ত মনজিলে।
[সূরা ফুরকান, ২৫ : ৭৫-৭৬]
“তাদেরকে তাদের ধৈর্যধারণের বদলা হিসেবে জান্নাত দেওয়া হবে। সেখানে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানো হবে সংবর্ধনা ও সালাম সহকারে। তারা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে। অবস্থান ও আবাস্থল হিসেবে তা কতই-না উত্তম!”
যদি দীর্ঘদিন কষ্ট করার পরও ভালো চাকরি না পায়, কিংবা ব্যবসায় মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা যায়, অথবা কোনো প্রিয় জিনিস যদি হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে, তখনো মনমরা হয়ে পড়ে থাকে না। কারণ, তার রবের ওয়াদা মমতার পরশে শুনিয়ে দেয় : “আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো প্রিয়তম কিছু দুনিয়া থেকে তুলে নিই আর সে ধৈর্যধারণ করে, তার জন্যে জান্নাত ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিদান নেই আমার কাছে।” [বুখারি, আস-সহীহ : ৫৯৮১] কেউই যখন তাকে বুঝতে চায় না, তার সমস্যাগুলো শুনতে চায় না, কিংবা প্রিয় কেউ ভুল বুঝে দূরে চলে যায়, তখনো সে একাকীত্ব অনুভব করে না। বরং খুশিমনে বলতে থাকে : “আমি তো আমার দুঃখ ও অস্থিরতা আল্লাহর সমীপেই নিবেদন করছি।” [সূরা ইউসুফ, ১২ : ৮৬]
আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে হারাম চাকরি ছেড়ে দিয়ে সে যখন সামান্য মাইনেতে ছোটখাটো কোনো জব করতে থাকে আর তাই দেখে বন্ধু-বান্ধবরা মজা নেয়, তখনো সে বিচলিত হয় না। কারণ, সে জানে : “আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুককে ভালোবাসেন। অতএব তুমিও তাকে ভালোবাসো।’ (এ কথা শোনার পর) জিবরীলও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন। এরপর তিনি আসমানের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন—‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালোবাসো।’ তখন আসমানবাসীরাও ওই বান্দাকে ভালোবাসতে শুরু করে। তারপর পৃথিবীতে তাকে সম্মানিত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।” [বুখারি, আস-সহীহ : ৩২০৯]
লোকদের হাজারও ঠাট্টা-মশকারা তাকে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। নিন্দুকরা যখন তাকে নিয়ে কানাঘুষো করে, তখন এই আয়াত স্মরণ করে তার অন্তর প্রফুল্ল হয়ে ওঠে : “সম্মান তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যেই। কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।” [সূরা মুনাফিকুন, ৬৩ : ৮] যখন কোনো দুঃখ এসে কড়া নাড়ে তার দরজায়, কষ্টগুলো তার হৃদয়কে উথালপাথাল করে তোলে, জীবনবীণায় যখন করুণ সুর বাজতে থাকে, তখন আল্লাহর বাণী তাকে সান্ত্বনা প্রদান করে বলে : “নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।” [সূরা আশ-শারহ, ৯৪ : ৫]
রাত জেগে মাসের-পর-মাস পড়শোনা করার পরও ভালো জবটা যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, কিংবা রক্ত পানি করে উপার্জিত টাকাগুলো যদি ছিনতাই করে নেয় কেউ, কিংবা দুর্ঘটনায় যদি তার অঙ্গহানিও হয়, তবুও সে হাল ছড়ে না। এমনকি এটুকুও বলে না—‘ইশ! আমি যদি আরেকটু সাবধান হতাম, তবে তো এমনটা হতো না।’ কারণ, প্রিয়নবি ﷺ তাকে শিখিয়েছেন : “…আর যদি তোমাদের ওপর কোনো (বিপর্যয়) আসে, তা হলে এমন কথা বলবে না যে, ‘ইশ, যদি আমি এমনটি না করতাম, তা হলে আমার আজ এমন পরিণাম ভুগতে হতো না।’ বরং বলবে, ‘আল্লাহ (তাকদীরে) যা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন, তা-ই হয়েছে।’ ‘যদি’ কথাটা শয়তানের দরজা খুলে দেয়।” [মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস : ৬৪৪১]
কখনো যদি সে অর্থসঙ্কটে পড়ে যায়, কিংবা একের-পর-এক যাতনা, বিপদ, অসুস্থতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা কিংবা ক্ষতির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হতে থাকে, তবুও সাহস হারায় না। মনোবল ভেঙে পড়ে না তার। কারণ, তার পিঠে হাত বুলিয়ে নবিজি বলতে থাকে : “সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত হন নবিরা, অতঃপর তাঁদের নিকটবর্তীরা, এরপর এদের নিকটবর্তীরা। মানুষকে তার ঈমান অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। যদি তার ঈমান শক্তিশালী হয়, তা হলে তার পরীক্ষাও কঠিন হয়। আর যদি তার ঈমান দুর্বল হয়, তা হলে তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে হালকা হয়। বিপদ বান্দার পিছু ছাড়ে না, পরিশেষে তার অবস্থা এমন হয় যে, পাপমুক্ত হয়ে সে জমিনে চলাফেরা করে।” [তিরমিযি, আস-সুনান : ২৪০১; আলবানি, আস-সহীহাহ্ : ১৪৪]
সে আরও হিম্মত পায় যখন শুনে রাসূল ﷺ তাকে লক্ষ করে বলছেন : “মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে-সকল যাতনা যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এসবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন।” [বুখারি, আস-সহীহ, হাদীস : ২১৩৭]
ওর পাশেই যখন কেউ পর্ন-মিউজিক-নারী-অ্যালকোহলের মধ্যমে মাস্তি করতে থাকে, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এগুলো থেকে। শক্ত করে জমিন কামড়ে ধরে অশ্লীলতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। কখনো ঝরে যায় না। হারিয়ে যায় না অমাবস্যার নিকষকালো আঁধারে। কারণ সে জানে—জান্নাতের অনাবিল সুখ-শান্তির কাছে এসব তো কিছুই না।
“তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার হিসেবে তাদের জন্যে যেসব চোখজুড়ানো বস্তু লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তা কেউই জানে না।” [সূরা সাজদা, ৩২ : ১৭]
যুবক বয়সেই দ্বীনের ওপর চলার কারণে যখন কেউ ঠাট্টা-মশকারা করে তাকে নিয়ে, তাকে ব্রেইন ওয়াশড বলে গালি দেয়, তখন সে কুরআনের এই আয়াত স্মরণ করে :
“অপরাধীরা মুমিনদের উপহাস করত। এবং তারা যখন মুমিনদের পাশ দিয়ে গমন করত, তখন পরস্পর চোখটিপে ইশারা করত। যখন তারা পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরত, তখন (মুমিনদের ঠাট্টা করে আসার জন্যে) তারা ফিরত উৎফুল্ল হয়ে। আর যখন মুমিনদেরকে দেখত, তখন বলত—এরা তো অবশ্যই বিভ্রান্ত।” [সূরা মুতাফফিফীন, ৮৩ : ২৯-৩২]
এই আয়াত সে বারবার স্মরণ করে, আর বিস্মিত হয়। আল্লাহ তাআলা হাজারও বছর আগে ওসব লোকদের কথা তাকে জানিয়ে দিয়েছেন, যারা আজ তাকে ব্রেইন ওয়াশড বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। সে মোটেও মন খারাপ করে না ওদের কথা শুনে। সে জানে—একদিন তারও সুযোগ আসবে। সে সিংহাসনে রাজার মতো বসে বসে ওদের উপহাস ওদেরকেই ফিরিয়ে দেবে।
[সূরা মুতাফফিফীন, ৮৩ : ৩৪-৩৬]
“আজ মুমিনগণ অবিশ্বাসীদের উপহাস করছে। সিংহাসনে বসে তাদের (অবিশ্বাসীদের) অবস্থা দেখছে। (আর বলছে,) অবিশ্বাসীরা তাদের কৃতকর্মের ফল পেলো তো?”
মুমিনের কোনো লস প্রজেক্ট নেই। সবটাই তার লাভ। মুমিন গোনাহ করে তাওবা করলে পায় মাগফিরাত, যুদ্ধে জয়ী হলে পায় গনীমত, আল্লাহর জন্যে মারা গেলে পায় শাহাদাতের মর্যাদা। মুমিন যদি সুখের মধ্যে থাকে, সেটাও তার জন্যে কল্যাণকর। যদি কষ্টের ভেতরে থাকে, সেটাও তার জন্যে কল্যাণকর। মুমিনের শুধু লার-আর-লাভ।
“মুমিনের বিষয়টি বড়ই বিস্ময়কর! তার সবকিছুই কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কারও ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য নয়। তার জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি এলে সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে। ফলে তা হয় তার জন্য কল্যাণকর। আর দুঃখ-দুর্দশার মুখোমুখি হলে সে ধৈর্যধারণ করে। ফলে তাও হয় তার জন্যে কল্যাণকর।”
[মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস : ২৯৯৯]
এভাবেই একজন সত্যিকারের মুমিন আত্মিক তৃপ্তির মধ্যে থাকে। সর্বদা প্রশান্ত থাকে তার হৃদয়। জান্নাতীসুখ অনুভব করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তার জীবন হয় পবিত্র, নির্মল।
“যে সৎকর্ম করে—হোক সে ঈমানদার পুরুষ কিংবা নারী—আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব।”
[সূরা নাহল, ১৬ : ৯৭]
আর যে পাপাচারী, অবিশ্বাসী, কুপ্রবৃত্তির দাস—সে সর্বদাই বঞ্চিত হয় প্রশান্তি থেকে। কারণ, না পাওয়ার বেদনা তার অন্তরে সারাক্ষণ হাহাকার সৃষ্টি করে রাখে। আত্মিক তৃপ্তি সে কোনোদিনও পায় না। তার অন্তরে প্রতিনিয়ত দোলা দেয় সকরুণ সুর। সে রবীন্দ্রনাথের মতো গাইতে থাকে :
এই বেদনার ধন সে কোথায় ভাবি জনম ধ’রে।
ভুবন ভরে আছে যেন, পাই নে জীবন ভরে।
সুখ যারে কয় সকল জনে বাজাই তারে ক্ষণে ক্ষণে—
গভীর সুরে ‘চাই নে’ ‘চাই নে’ বাজে অবিশ্রাম।
ভাই আমার! এই কথাগুলো আমি সেদিন বোঝানোর চেষ্টা করেছি রাকিবকে। আজ তোমাকে বলছি—যদি সত্যিই হতাশার তীব্র উত্তাপের মধ্যে একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে চাও, হৃদয়কুঞ্জকে সুগন্ধী ফুলের সুবাসে সুরোভিত করতে চাও, জীবনের পরতে পরতে জান্নাতীসুখ অনুভব করতে চাও, তবে বদলে ফেলো নিজেকে। আপাদমস্তক নিজেকে আল্লাহর বিধানের অধীন করে নাও। দেখবে, কল্যাণের বারিধারা নেমে আসবে তোমার হৃদয়রাজ্যে। আর সেই বারিতে অবগাহন করে প্রশান্ত হয়ে যাবে তোমার তনুমন। অসত্যের বদ্ধ কুঠুরি থেকে বেরিয়ে এসো, রোদ্দুর ঠিকই খেলা করবে তোমার উঠোনে। বাতায়ন খুলে দিলেই তো দখিনাহাওয়া প্রবেশ করার সুযোগ পাবে। তাকে সে সুযোগ করে দেবে না?
শুনো, কফিটা একটু আস্তে আস্তে খাও। সামনে আরও কিছু কথা হবে তোমার সাথে, সে পর্যন্ত যেন চলে। ইবনুল কাইয়িম -এর কিছু কথা হৃদয়ে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো শুনিয়েই ইতি টানছি এই অধ্যায়ের :
[ইবনুল কাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন, ৩/১৫৬]
“প্রত্যেকটা মানুষের অন্তরেই কিছুটা অস্থিরতা বিদ্যমান, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই কেবল তা দূর করা সম্ভব। প্রত্যেকের অন্তরেই রয়েছে একাকীত্বের অনুভূতি, শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্যের দ্বারাই সেটা নির্মূল করা সম্ভব। প্রত্যেকের অন্তরেই ভয় এবং উদ্বেগ বিরাজমান, যা কেবল আল্লাহর কাছে ছুটে যাওয়ার মাধ্যমেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। প্রতিটা অন্তরেই কিছুটা দুখানুভূতি বিদ্যমান, যা শুধু আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমেই মোচন করা সম্ভব।”