কবিপাড়ায় আমার তেমন নেমন্তন্ন নেই।
ডাক পড়ে না বললেই চলে।
লোকে বলে, আমি মৌলবাদী কবি। প্রগতিবাদী নই
তাই সবেই এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করে।
প্রকৃতিপূজা, নারীপূজা, প্রেমপূজা—
কোনোটাতেই আমি সিদ্ধহস্ত নই।
দেশপ্রেমের মূর্তি বানিয়ে সেটাকে নমঃ নমঃ করে
নিজেকে দেশপ্রেমিক প্রমাণে আমি শতভাগ ব্যর্থ।
আমার মৌলবাদী ট্যাগ খাওয়ার এটা একটা বড়ো কারণ।
আমি নাকি কবিতার সাথে ইসলাম মিশিয়ে
কবিতার সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলেছি।
আমি বুঝলাম না, এ এমন কী মহাপাপ?
রবিঠাকুর যদি কবিতার সাথে পৌত্তলিকতা মিশিয়ে
দিব্যি ‘কবিগুরু’ হতে পারে,
তবে আমি কেন কবিতার সাথে ইসলাম মিশিয়ে
‘শিষ্যকবি’ হতে পারব না?
এর উত্তর আজ অব্দি পাইনি।
একবার এক কবিতাপাঠের আসরে আমার ডাক পড়ল।
সব বড়ো বড়ো কবিরা ওখানে হাজির হবেন।
প্রিয় কবির
একটি করে কবিতা
আবৃত্তি করে শোনাবেন সবে।
যথাসময়ে হাজির হলাম আমি। একে একে সব কবিদের
কবিতাপাঠ শুনলাম। বেশিরভাগ কবিই আবৃতি করলেন
রবীন্দ্রনাথের কবিতা।
মৌলবাদী ট্যাগ আছে বলে আমার ডাক পড়ল সবার শেষে।
পকেট থেকে ভাঁজকরা একখানা কাগজ বের করে
আমি পড়তে শুরু করলাম—
“চিন-ও-আরাব হামারা, হিন্দুস্তা হামারা
মুসলিম হেঁ হাম, ওয়াতান হেঁ সারা জাহাঁ হামারা... ”
কেবল এটুকু পড়েছি,
অমনিই সবাই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল।
সমস্বরে বলল,
চেতনাময় বাংলায়, ইকবালের ঠাঁই নাই।
আমি তো অবাক! কেন? কেন?
উত্তর এল,
ইকবাল এ-দেশের কেউ না।
আমি বললাম, রবীন্দ্রনাথও তো এ-দেশীয় কবি না।
তিনি কোলকাতার লোক।
পরে কী হয়েছিল, মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে
হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম।
গাঁয়ে ছিল টনটনে ব্যথা। কোনোমতেই শরীর নাড়াতে পারছিলাম না।