অনেক মোটিভেশনাল স্পিকাররা বলে থাকে, প্রাপ্তবয়স্করা সব ব্যাপারে স্বাধীন। তারা যদি একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে কার বাপের কী! সম্মতি (Consent) থাকলে প্রেম-ভালোবাসা, এমনকি ফিজিক্যাল রিলেশনও বৈধ। এতে সমাজের আপত্তি করার কিছু নেই। যিনা-ব্যভিচারকে নর্মাল করে দিচ্ছে এসব তথাকথিত সেলিব্রেটিরা।


পশ্চিমারা আমাদেরকে ‘Consent’ নামের একটা জঘন্য শব্দ শিখিয়েছে। কনসেন্ট বলতে বোঝায় ‘সম্মতি’। তাদের ভাষ্যমতে, শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়ের যদি সম্মতি থাকে, তাহলে সেটা বৈধ। পশ্চিমের এই বয়ান চোখ বুঝে প্রচার করছে বাংগু পোগোতিশীলরা। তাদের কথাগুলো শুনতে খুবই মধুর লাগে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, এগুলো শয়তানের শেখানো (কু)যুক্তি মাত্র। সত্যের সাথে এর কানাকড়িও সম্পর্ক নেই। সম্মতি থাকলেই যিনা-ব্যভিচার হালাল হয়ে যায় না। কোনো হারামকে হালাল সাব্যস্ত করার ক্ষমতা মানুষের নেই। হালাল ও হারাম আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিধান। এই অধিকার কোনো মাখলুককে দেওয়া হয়নি। যেসব সেলিব্রেটিরা প্রেম ও যৌনতাকে সম্মতি থাকলে ভালো বলে, তারা আসলে মিথ্যাবাদী।


“বলো, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করছো?”[1]


অনুমতি থাক বা না-থাক, বিয়ে ছাড়া একজন নারী-পুরুষ কখনোই কাছাকাছি আসতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ককে চিরকালের জন্যে হারাম করে দিয়েছেন। কোনো মায়ের ব্যাটার ক্ষমতা নেই একে বৈধ সাব্যস্ত করার। এখানে কোনো যুক্তি-তর্কের অবকাশ নেই। আল্লাহর কসম! হারামের পক্ষে পশ্চিমাদের হাজারটা থিউরি, মোটিভেশনাল স্পিকারদের হাজারটা যুক্তি—কোনোটারই বিন্দু পরিমাণ মূল্য নেই। বিয়ে-বহির্ভূত প্রেম মানেই অশ্লীলতা। এতে শতবার সম্মতি থাকলেও সেটা অপবিত্র, হারাম।


“বলো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা এবং সর্বপ্রকার গোনাহ।”[2]


বেগানা নারীর সাথে প্রেম করা খুবই গর্হিত কাজ। সেটাকে আবার ভালো মনে করা তো আরও জঘন্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তি যদি অকাট্ট কোনো হারাম বিধানকে হালাল মনে করে, তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআনে এই শ্রেণীর লোকদেরকে শায়েস্তা করার কথা বলা হয়েছে:


“আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে না; আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম বলে গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনের অনুসরণ করে না, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো—যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে নিজ হাতে জিজিয়া দেয়।”[3]


মুমিনের জন্যে হালাল হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা। এই বাইরে পা ফেলা নিষিদ্ধ।[4] অথচ ওরা আমাদেরকে শিখাচ্ছে—‘চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে?’ একটা বেগানা নারীর পিছু নিলে কোনো দোষ নেই! এ কেমন সাংঘাতিক কথা! এভাবেই হারামকে নর্মালাইজড করা হচ্ছে যুগে যুগে। অথচ, ইসলামের বিধান সব যুগেই অপরিবর্তনশীল।


পশ্চিমা বয়ানের মাধ্যমে যিনা-ব্যভিচার কখনোই পবিত্র হয়ে যাবে না। বিয়ে-বহির্ভূত প্রেম চিরদিনই হারাম থেকে যাবে। ফ্রি-মিক্সিং কিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে। সেটা গ্রুপ স্টাডির নামে হোক, জাস্ট ফ্রেন্ডের নামে হোক, কিংবা নিজেদের বানানো তথাকথিত ভাই-বোন সম্পর্কের মাধ্যমে হোক। এগুলো সবই ঘৃণিত কাজ। এরপরেও যেসব লোকেরা কনসেন্টের দোহাই দিয়ে মুসলিম-সমাজে অশ্লীলতার প্রচার ঘটাবে, তাদের শাস্তি হবে বড্ড মারাত্মক।


“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”[5]


[1] সূরা ইউনুস, ১০ : ৫৯।

[2] সূরা আরাফ, ৭ : ৩৩।

[3] সূরা তাওবা, ৯ : ২৯।

[4] আল্লাহ তাআলা বলেন, “এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন কোরো না। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে তারাই অবিচারী।” [সূরা বাকারা, ২ : ২২৯]

[5] সূরা নূর, ২৪ : ১৯।